ঢাকা   শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৩ পৌষ ১৪৩১

প্রশ্ন: কিসব কারণে বিয়ের বরকত নষ্ট হয়ে যায়?

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম

উত্তর: বিবাহ পরম পূণ্যের কাজ। একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। এর দ্বারা জীবন হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। একটি পরিবর্তন এনে দেয় জীবনে। শুরু হয় আরেকটি নতুন অধ্যায়। জীবনে এ অধ্যায় দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ বয়ে আনে। বিবাহ দ্বীন-দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে, যদি রাসূল সা. এর অনুসৃত তরিকা অনুযায়ী হয়। দ্বীনের সীমা লংঘিত না হয়। ইসলামে বিয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট নিয়ম কানুন ও বিধিমালা রয়েছে। এই নিয়ম বিধানকে উপেক্ষা করে নিজেদের খেয়াল খুশী মত বিয়ের কার্যাদি সমাধা করার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই, রবং রয়েছে সব ধরণের অকল্যাণ, অশান্তি।

বিবাহ একটি সুন্নত। সুতরাং বিবাহ সুন্নত তরিকায় সংঘঠিত করাই সমীচীন। কিন্তু আধুনিক সমাজে মুসলিম পরিবারে বিয়ে-শাদীতে কুসংস্কার ঢুকে গিয়েছে। আধুনিকতার নামে চলছে অপচয়, অশ্লিলতা, বেহায়াপনা, অবাধ্যতা। চলছে অকল্যাণ ও সুন্নত বহির্ভুত গর্হিত কর্মকান্ড। যা বিয়ের বরকত নষ্ট করে দেয়। বাগদান থেকে শুরু করে বিয়ের কিছু দিন পর পর্যন্ত যত রসুম-রেওয়াজ হয় সবই রাসূল (সা.) এর অনুসৃত তরিকার পরিপন্থি।

বরের মাথায় ফুলের মালা, হাতে রঙিন কাপড় পড়ানো, জ্বিন-ভুতের ভয়ে কোমরে লোহার বেড়ী বাঁধা, গায়ে হলুদ, বরের হাতে মেহেদী দেওয়া, কোন নারী-ভাবী কর্তৃক বরকে গোসল দেয়া, একে অপরকে রং দেওয়া, নারীদের নৃত্য প্রদর্শণ, নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকাদের নাচ-গান-বাজনা-তামাশা, আতশবাজি, যুবক-যুবতিদের অবাদ মেলামেশা ইত্যাদি। আর যারা সামান্য সম্পদশালী তারা গেইট বেধে রকমারি বাতি জ্বালিয়ে রাস্তা থেকে বাড়ি পর‌্যন্ত সাজিয়ে জাহান্নামের আকৃতি ধারণ করানো দেখে মনে হয় যে, আল্লাহ তা’লা তাদেরকে যে ধন-সম্পদ দান করেছেন তা শুধুমাত্র বিয়ে-শাদীতে লুটিয়ে দেয়ার জন্য দান করেছেন। এ ছাড়া আর কোন ব্যায়খাত ধার্য করেননি।

আমাদের সমাজ রাসূল (সা.) এর কর্মনীতি থেকে দূরে সরে গিয়েছে। প্রচলিত বিয়ে-শাদীর আনুষ্টনিকতা রাসূল (সা.) এর আনুগত্যমুলক নয়। যা আছে তা একমাত্র ইজাব-কবুলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ বলা যায়। রাসুল (সা.) এর স্ত্রী খাদিজা (রা.)’র ইন্তিকালের পর হযরত আয়েশা (রা.)’র সাথে রাসূল (সা.) এর বিবাহ কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সুসম্পন্ন হয়েছিল। ওয়ালিমার দাওয়াত রাসূল (সা.) মাত্র এক পেয়ালা দুধ দিয়েই সম্পন্ন করেছিলেন।

রাসুল (সা.) এর কলিজার টুকরা মেয়ে হযরত ফাতিমা (রা.)’র বিবাহের সময় মাত্র এক প্লেট খেজুর উপস্থিত জনতার মাঝে বন্টন করেন আড়ম্বরপূর্ণ কোন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছিল। বরের সাথে আগত মেহমানদের আয়োজনে শত শত মানুষকে খাওয়ানোর জন্য মুরগির ফ্রাই, বিফ ভূনা আর রকমারি খাবারের আয়োজন করেন নাই। যদি আনুষ্টানিকতার মধ্যে কোন বরকত নিহিত থাকতো তাহলে রাসূল (সা.) কখনোই তা পরিত্যাগ করতেন না; বরং আড়ম্বরপূর্ণ ভোজানুষ্টান করতে পারতেন। তিনি এসব করেননি যা থেকে পরিস্কার হয় যে, এহেন অনুষ্ঠানের জন্য অপচয় করা, ধার-কর্য করে অথবা হাত পেতে অর্থ সংগ্রহ করে ব্যয় করা নিতান্ত অনর্থক এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির পরিপন্থি।

সমাজে মান হানির ভয়ে অনেকে বছরের পর বছর পার হলেও বিয়ে করার সাহস করতে পারছে না। যারা করছে, তারা সুস্থ সাংস্কৃতিক জীবনযাপনের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বিবাহ করতে হচ্ছে ধার-কর্য করে। টিভি, ফ্রীজ, মোটর সাইকেল, কাঠের ফার্নিচার, যৌতুক ইত্যাদি দেয়ার সামর্থ না থাকায় এবং বরের সাথে আগত শত শত অতিথির মেহমানদারির ভোজানুষ্ঠান করতে অক্ষমতার কারণে অনেক পিতা বিয়ে দিতে পারছেন না তার বিবাহ উপযুক্ত মেয়েকে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান করতে পারছেন না তাই লোকসমাজে মানহানি ও সমালোচনার ভয়ে বিবাহ উপযুক্ত ছেলের বিয়ে সম্পন্ন করতে পারছেন না অনেক অভিভাবকরা। এই হচ্ছে আমাদের সমাজ!

যৌতুক নারীর প্রতি একটি অভিশাপ। মস্তবড় একটি জুলুম। যৌতুক দিতে না পারার কারণে বহু নারীর বিয়ে হয় না। বিয়ে হলেও এই যৌতুকের কারণেই অনেকের সংসার সুখের হয় না। লোভী, সংকীর্ণ মন-মানসিকতা সম্পন্ন স্বামীর ঘরে অপমান ও নির‌্যাতন সহ্য করতে হয় বহু নারীকে। অনেক নারীকে নরপিশাচ স্বামীর হাতে দিতে হয় জীবনও। ইসলাম নারীর আর্থিক সামর্থ্য দানের লক্ষ্যে এবং তার সম্ভ্রমকে সম্মান জানানোর জন্য ‘মাহর’ নির্ধারিত করে দিয়েছে। কিন্তু উল্টো দেখা যায়, ‘মাহর’-এর স্থলে যৌতুকের অবৈধ আবদারের অর্থ ও স¤পদ দিতে হয় কন্যা পক্ষকে। ইসলাম এ অন্যায়কে অনুমোদন করে না।

এছাড়া বিয়ের দিন কনের বাড়িতে দলবেঁধে খাওয়ার অনুষ্ঠান। এক্ষেত্রে নারীর অভিভাবকের ঘাড়ে যেমন চাপানো হয় শত শত মেহমানের ব্যায়ভার তেমনি বরের পক্ষেও গাড়ী শুভাযাত্রা, ক্যামেরা ইত্যাদিসহ ব্যয়ের মাত্রা মুটেই কম নয়। এটা সম্পুর্ণ অনর্থক এবং অপচয়ও। কুরআনে আল্লাহ তা’লা অপচয় করা থেকে নিষেধ করেছেন এবং আপচয়কারীদেরকে শয়তানের সাথে তুলনা করেছেন। অপচয় না করার জন্য নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা’লা বলেন- “কিছুতেই অপচয় করো না। অবশ্যই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই; আর শয়তান হচ্ছে তার প্রতিপালকের বড় অকৃতজ্ঞ।” (সূরা বানী ইসরাইল-২৭)

উত্তর দিচ্ছেন: মুহাম্মদ আবদুল হামিদ, প্রবন্ধকার, সভাপতি : ইসলামী তরুণ সংঘ।


বিভাগ : ইসলামী প্রশ্নোত্তর


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আজানের জবাব দেওয়া প্রসঙ্গে।
বিয়ের করার সময় যে সমস্ত খেয়াল রাখা প্রসঙ্গে।
স্বামীর অগোচরে স্ত্রী অন্য কারও সাথে কথা বলা প্রসঙ্গে?
স্ত্রী পর্দা করতে না চাইলে করণীয় প্রসঙ্গে।
সন্তান জীবিত থাকতে আকিকা দিতে না পারলে মারা যাওয়ার পর আকিকা করা প্রসঙ্গে?
আরও

আরও পড়ুন

বিয়ে-বাচ্চা সব মানুষ হওয়ায় দিছে: জেফার

বিয়ে-বাচ্চা সব মানুষ হওয়ায় দিছে: জেফার

নতুন শাসকদের সাথে সংঘর্ষে সিরিয়ায় আসাদ অনুসারীদের হাতে ১৪ জন নিহত

নতুন শাসকদের সাথে সংঘর্ষে সিরিয়ায় আসাদ অনুসারীদের হাতে ১৪ জন নিহত

কালকিনিতে ইউপি সদস্য নিহত, আহত ১০

কালকিনিতে ইউপি সদস্য নিহত, আহত ১০

রাজধানীতে শীতের ছোঁয়ায় শীতল সবজির বাজার

রাজধানীতে শীতের ছোঁয়ায় শীতল সবজির বাজার

উত্তরা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হলেন ফয়সাল তাহের

উত্তরা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হলেন ফয়সাল তাহের

মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ২ গ্রুপের সংঘর্ষ, ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা

মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ২ গ্রুপের সংঘর্ষ, ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা

সংস্কার ও নির্বাচনী প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলবে: প্রধান উপদেষ্টা

সংস্কার ও নির্বাচনী প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলবে: প্রধান উপদেষ্টা

ইংরেজি নববর্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ

ইংরেজি নববর্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ

ইন্টারপোলের তালিকায় হাসিনার নাম যুক্ত হওয়া নিয়ে যা জানা গেল, খোঁজা হচ্ছে আরও যেসব বাংলাদেশিকে

ইন্টারপোলের তালিকায় হাসিনার নাম যুক্ত হওয়া নিয়ে যা জানা গেল, খোঁজা হচ্ছে আরও যেসব বাংলাদেশিকে

দক্ষিণ কোরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসন ভোট, মুদ্রার মান পতন

দক্ষিণ কোরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসন ভোট, মুদ্রার মান পতন

কটিয়াদীতে তুচ্ছ ঘটনায় শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম

কটিয়াদীতে তুচ্ছ ঘটনায় শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে জখম

জাহাজে ছেলে হত্যা: শোকে মারা গেলেন বাবা

জাহাজে ছেলে হত্যা: শোকে মারা গেলেন বাবা

ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকালে বিজিবি’র হাতে ১৬ বাংলাদেশি আটক

ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকালে বিজিবি’র হাতে ১৬ বাংলাদেশি আটক

সৈয়দপুরে রাস্তা সংস্কারে নিম্নমানের কার্পেটিংয়ের অভিযোগে কাজ বন্ধ করে দিলো ছাত্ররা

সৈয়দপুরে রাস্তা সংস্কারে নিম্নমানের কার্পেটিংয়ের অভিযোগে কাজ বন্ধ করে দিলো ছাত্ররা

শার্শায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২ গ্রুপে সংঘর্ষ

শার্শায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২ গ্রুপে সংঘর্ষ

ইউক্রেনে আহত উত্তর কোরীয় এক সেনা আটক

ইউক্রেনে আহত উত্তর কোরীয় এক সেনা আটক

টাকা খেয়ে আ.লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে ভারতের মিডিয়া : সারজিস

টাকা খেয়ে আ.লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে ভারতের মিডিয়া : সারজিস

বাংলাদেশের সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র : জাতীয় নাগরিক কমিটি

বাংলাদেশের সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র : জাতীয় নাগরিক কমিটি

সিরিয়ার সাবেক বিচারপতিকে গ্রেপ্তার করেছে প্রশাসন

সিরিয়ার সাবেক বিচারপতিকে গ্রেপ্তার করেছে প্রশাসন

ফেসবুকে কাকে ননসেন্স বললেন শবনম বুবলী

ফেসবুকে কাকে ননসেন্স বললেন শবনম বুবলী